রাকিবুল ইসলাম : দীর্ঘ তিন মাসের সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটক ও জেলেদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবনের দ্বার। এখন থেকে বৈধ ভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারছে জেলে ও পর্যটকরা। সুন্দরবনের সাতক্ষীরার রেঞ্জের দর্শনীয় স্থান কলাগাছিয়া, দোবেকি ও জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন আকাশলীনায় দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনাথী আসছেন সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন। পর্যটকদের দাবি, ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, জলযান ও রিসোর্ট বা হোটেল-মোটেল নির্মাণ হলে পর্যটক আরো বাড়বে।
ফ্যামালি নিয়ে ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা রিপন হোসেন জানান, অনেক আগে সুন্দরবনে আসতে চেয়েছিলাম সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিলো বলে আসতে পারিনি। বাংলাদেশের অনেক দর্শনীয় স্থানে গিয়েছি। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মতো এত মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি অন্য কোথাও পাইনি। হাজার রকমের উদ্ভিদ, বন্য ও জলজপ্রাণীতে ভরপুর বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, যা কাছ থেকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি আমরা। সময় পেলে আবারো আসবেন বলে জানান তিনি। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নতির পাশাপাশি সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলারও দাবি জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা পর্যটক আবু হেনা আলম জানান, প্রথমবারের মতো সুন্দরবন ভ্রমণে এসে প্রকৃতি উপভোগ করছি। এর আগে রাঙ্গামাটি ও রংপুর বিভাগের অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরেছি। কিন্তু সুন্দরবনের যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তা অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। সময় পেলে আবারো সুন্দরবন ভ্রমণে আসবো।
সুন্দরবনের কোলে অবস্থিত বরসা রিসোর্ট এন্ড ট্যুরিজম সেন্টারের ম্যানেজার মোঃ রাজু আহমেদ জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমাদের এখানে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সুন্দরবনের ভিতরে প্রবেশে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা ছিল গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশে অনুমতি মিলছে। আমাদের রিসোর্টে মোট ২৮টি বিভিন্ন ক্যাটাগীরির রুম রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি উদ্যোগে সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবনে যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি নিশ্চিত ও সুন্দরবনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন আনলে চাহিদার তুলনায় সুন্দরবনে পর্যটক আরও দ্বিগুন বৃদ্ধি পাবে।
টাইগার পয়েন্ট রিসোর্টের পরিচালক মোস্তফা আখতারুজ্জামান বলেন, সুন্দরবনে প্রবেশে অনুমতি মিলেছে এখন অন্যদিকে পদ্মা সেতু হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সুন্দরবনে পর্যটক আসছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। আশাকরি সামনের দিনগুলোতে পর্যটকদের আরও চাপ বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, বাস বা অন্য যেকোনো যানবাহন থেকে নেমেই সরাসরি সুন্দবরন দেখা যায় কেবল সাতক্ষীরায়। অন্য এলাকা দিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণে গেলে নৌপথে অনেক দূর অতিক্রম করার পর সুন্দরবনের দেখা মেলে। পর্যটক বাড়াতে হলে এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন দরকার। তাছাড়া সরকারিভাবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। একজন পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে এলে প্রথমেই তিনি সুপেয় পানি সংকটে পড়েন।
সাতক্ষীরা বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। গেল বছর ভ্রমণকারীর সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার ৬৭৯ জন, যা প্রতি মাসে গড়ে সোয়া তিন হাজারের মতো। এর মধ্যে বিদেশী ভ্রমণকারী ছিল ২৯ জন। সূত্রটি আরো জানায়, এসব ভ্রমণকারীর কাছ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। গত বছর পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণে জন প্রতি ৭৫ টাকা করে সরকারি কর ধার্য ছিল, যা চলতি বছরের শুরু থেকে দ্বিগুণ অর্থাৎ জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) ইকবাল হুসাইন চৌধুরী জানান, সাতক্ষীরায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের ইকোট্যুরিজম কলাগাছিয়ায় পর্যটকের বিভিন্ন সুবিধার পাশাপাশি ফুট ট্রেইলর পাকাকরণ, হরিণ ও কুমিরের বেষ্টনী নির্মাণ, গোলাঘর এবং বেঞ্চ করা হচ্ছে। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অংশে পর্যটকের আগমন যে হারে বাড়ছে তাতে করে আরো নতুন নতুন এবং পরিবেশবান্ধব ইকোট্যুরিজম স্পট নির্মাণ করতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, ভ্রমণকারীদের কাছে সুন্দরবন খুবই আকর্ষণীয়। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ যাতে ধ্বংস না হয় দর্শনার্থীদের সেদিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। ডিসি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সুন্দরবন পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ভ্রমণে পর্যটকদের আরো আকর্ষণ করে তুলতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে। তাছাড়া সুন্দরবন রক্ষায় যা যা করণীয় প্রশাসনের তরফ থেকে সে ব্যাপারেও কাজ করা হবে।